somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্ট অফিস থেকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট।

০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নানীর জন্ম ১৫ ফেব্রুয়রি ১৯৫৮। এই জন্ম তারিখ আসল কি না জানি না। এই জন্ম তারিখ তাহার এসএসসি সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে সংগ্রহ করা। নানী যখন জন্ম গ্রহন করেন তখন ছিলো পাকিস্তান শাসন আমল। আমার নানী জন্ম গ্রহন করেন গ্রামে। তখন শুধু সরকারি অফিসারের বাড়িতে পাকা দালান ছিলো। আর শহরে পাকা দালান ছিলো। গ্রামে বিদুৎ এর কথা কল্পনাও করা যেতো না।

সে সময় আমাদের গজারিয়া উপজেলা (মুন্সীগঞ্জ) সম্পন্ন কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি ছিলো। নানীর দাদা ছিলো সিকান্দার পন্ডিত। তিনি দলিল লেখক ছিলেন। নানীর দাদার ছিলো অনেক জমি। সেই জমিতে অনেক ধান উৎপাদন করতেন। দিনে ৫০ কেজি দুধ দোয়াতেন।







সে সময় আমাদের মত মোবাইল ছিলো না। ছিলো না টিভি। রেডিও ছিলো তাদের প্রধান বিনোদন এর মাধ্যম। তাও ২ গ্রাম মিলে একটি রেডিও পাওয়া যেতো কি না সন্দেহ। সে সময় সাইকেল যার কাছে ছিলো, সে ছিলো বিশাল বড়লোক।



নানী বড় হয়। ১৯৭১ সালে নানী কিভাবে সারভাইব করেছে সেটা নিয়ে একটি ব্লগ লিখেছিলাম। দেশ স্বাধীন হয়। আমাদের নানীর বিয়ে হয় নানার সাথে। নানা ছিলো বুদ্ধিমান লোক। তিনি মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে সাতকাহনিয়া গ্রামে বিদুৎ আনে।

সাতকাহনিয়া গ্রামে কবে বিদুৎ এর খুটি পুতা তা সঠিক ভাবে বলতে পারে না। কিন্তু এর থেকে শুরু হয় আমাদের সাতকাহনিয়া গ্রামের নতুন অধ্যায়। কারন বিদুৎ আসার ফলে আমাদের সাতকাহনিয়া গ্রামে সন্ধ্যার পরেও আলোকিত হতে থাকে।





সে সময় যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো পোস্ট অফিস। স্বামী স্ত্রী, পিতা পুত্র, বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হতো। সম্ভবত ১৯৯৬ সালের দিকে সিটিসেল প্রথম মোবাইল অপারেটর হিসেবে দেশে আত্নপ্রকাশ করেন। ২০০১ সালের দিকে সিটিসেল, একটেল (বর্তমানে রাবি), গ্রামীনফোন এই তিনটি অপারেটর দেশে মোবাইল সার্ভিস প্রভাইট করে।

২০০১ সালে আমার নানা আমাদের সাতকাহনিয়া গ্রামের মধ্যে প্রথম মোবাইল ক্রয় করে। ২০০৬ সালের মধ্যে মোটামোটি টাকা ওয়ালা, মধ্যবিত্তরা মোবাইল ক্রয় করতে শুরু করে। ২০০১ সালে আমার নানা যখন মোবাইল ক্রয় করে তখন সিমের দামই ছিলো ১০ কিনবা ১২ হাজারের মত। আর মোবাইল সেট এর দাম ছিলো ২০ থেকে ২৫ হাজারের মত। ২০০৬ সালের দিকে নকিয়া মোবাইল এর দাম ২ হাজারে নেমে আসে। আর সিম কার্ড এর দাম ২০০ টাকায় নেমে আসে। মোবাইল আসার আগে যখন পোস্ট অফিস এর মাধ্যমে চিঠি আদান প্রদান রীতি ছিলো তখন একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা, ভালোবাসা, বিশ্বাস ও সম্মানবোধ ছিলো। আগে প্রেরকের থেকে প্রাপক পযর্ন্ত চিঠি ডেলিভারি করতে এক সপ্তাহ সময় নিতো। এখন তো ব্যাংক, বিকাশ, নগদের মাধ্যমে টাকা পাঠানো যায়। আগে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা পাঠাতো। এই সার্ভিসের নাম ছিলো মানি অর্ডার। আগে বই এর অর্ডার চিঠির মাধ্যমে দেওয়া হতো। বই হাতে পাইলে মূল্য পরিশোধ করা হতো। সম্ভবত এই সার্ভিসের নাম ভিপিপি সার্ভিস। এই সার্ভিস এখন চলে কি না, জানি না। তবে এখনো রেজষ্ট্রি চিঠি , পার্সেল প্রেরন, ও মানি ওর্ডার সার্ভিস আছে।

২০০৬ সালের দিকে টিভি ও ডিসের লাইন আমাদের গজারিয়া উপজেলার সবার ঘরে ঘরে এসে যায়। আমি সে সময় কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখতাম। এখন টিভি দেখিনা ঠিক, মোবাইলে কার্টুন দেখি। ইউটুব বুজে আমি কখন কার্টুন দেখবো।

২০১৪ সালের দিকে থ্রি জি আসার পরে দেশের ট্যাকনোলজি খাতে বিশাল বিপ্লব হয়। সবার ঘরে ঘরে বিদুৎ। সবার হাতে হাতে মোবাইল। অনেক তরুনদের হাতে এন্ড্রোয়েট মোবাইল। ততদিনে আমার নানী বৃদ্ধ।




এখন আসল কথায় আসি। উপরের কথাগুলো বললাম এই কথা বলাল জন্য। আমার নানী, বিদুৎ হীন সময় থেকে AI এর যুগ পযর্ন্ত বেচে ছিলো। কারন আমার নানী চ্যাট জিটিপি উদ্ভাবন হবার কয়েক মাস পরে মারা গেছেন। আমার নানী হয়তো AI শব্দটির সাথে পরিচিত না। তবে AI এর আবিষ্কারের পরে তো মারা গেছেন? তাই বলা যেতে পারে তিনি AI এর শুরু দিক টি পেয়েছেন। সুতরাং তিনি বিদুৎহীন সময় থেকে বিদুৎ সহজলভ্য সময়ে এসেছেন। পোস্ট অফিস চিঠির পরিবর্তে মোবাইল, ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড এর সুবিধা পেয়েছেন।

আমরা যারা জন্ম থেকে ঘুরে বিদুৎ এর আলো দেখেছি, মরার আগে আমরা কি কি যেন দেখি!!! যদি বৃ্দ্ধ বয়স পাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×