somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লোডশেডিংকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে নিজেই বানিয়ে নিন মিনি আই পি এস!!

০১ লা মে, ২০১২ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোডশেডিং এখন আমাদের জীবনেরই একটা অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। একটা সময় ছিলো যখন বিদ্যুৎ চলে গেলে উফ করে উঠতাম। এখন মনে হয়, আরে বিদ্যুৎ আসেতো চলে যাবার জন্যই। এখন চলে গেল, বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনের যখন মর্জি, তখন চলে আসবে। একেবারেই স্বাভাবিক।

তবে আপনার কাছে যদি যথেষ্ট টাকাপায়সা থাকে তাহলে লোডশেডিং আপনার জন্য কোন মাথাব্যাথার কারন না। আপনি চাইলেই জেনারেটর কিনতে পারেন, তেল কিনে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিভাগের লোকজনকে বুড়ো আন্গুল দেখিয়ে দিতে পারেন। আবার ছোটবড় আইপিএস ও কিনে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারেন। তবে যারা উপরের দুইটাই করতে পারছেন না তারা হয় ইমার্জেন্সি চার্জার লাইট ও ফ্যান কিনেন অথবা খাতা দিয়ে বাতাস খান আর মোবাইলের টর্চ জ্বলিয়ে লোডশডিংয়ের সময়টুকু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।

আমার বর্তমান লোডশেডিংয়ের সিডিউল অনুযায়ী ১ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে আর ৪ ঘন্টা থাকেনা। এই রেশিও তে বাজারের রেডিমেড চার্জারগুলি ঠিকমত চার্জ হবার পুযোগ পায় না, আবার এই চার্জার ফ্যান ও লাইটগুলির দামও বেশ এবং খুবই নিম্নমানের চাইনিজ যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি বিধায়, এগুলি তেমন একটা টিকেওনা।

তবে আপনার যদি নূন্যতম ইচ্ছাও থাকে তাহলে আপনি একটি মিনি আইপিএস বানিয়ে ফেলতে পারেন নিজ হাতেই। খুবই কম খরচে। খুবই অল্প সময়ে(২-৩ ঘন্টায়) চার্জ হয়ে যাবে আবার বেশী সময় আপনাকে আলো ও বাতাস দিবে। দরকার নেই যে আপনার এই ইলেকট্রনিক্স কাজে পূর্ব অভিজ্জতা থাকতে হবে। অথবা আপনি কোনদিনও এইসব ইলেকট্রনিক্স পার্টস চোখেও দেখেননি, আপনার দ্বারাও সম্ভব এই মিনি আই পি এস বানানো। আপনার শুধু দরকার এইটা বানানোর ইচ্ছা।

সংক্ষেপে সার্কিট ডায়াগ্রাম


এই কাজে আপনার লাগবে


আর চার্জার বানাতে যা লাগবে।


এই প্রজেক্টের সব পার্টস আপনি এই ছবির মার্কেটে পাবেন। সাথে দোকানের বিজনেস কার্ডের স্ক্যান কপিও দিয়ে দিলাম।




এই প্রজেক্টের কানেক্টিং তারগুলা একটু মোটা হতে হবে। আমি আমার প্রজেক্টে মনিটর বা সিপিইউর এসি তারের ভিতরের ৩ টি তার ইউজ করেছি। আপনাদের বাসায়ও এমন এসি পাওয়ার কর্ড অবশ্যই থাকবে।

প্রজেক্ট টির ডিটেইলসে যাবার আগে এই ডিডিওটা দেখুন


এবার ধাপে ধাপে এই আইপিএস এর যন্ত্রাংশ সংযোগর পদ্বতি ছবি সহ দেখানো হলো

১> বক্সের বাইরের স্ক্রু লাগানোর ছিদ্র, ট্রান্সফর্মার ও ব্যাটারী আটকানোর ক্লাম এর মাপ অনুযায়ী ক্যাসিংয়ে ছিদ্র করে ফেলুন। ব্যাটারী আর ট্টান্সফর্মার ও ব্যাটারী ক্লামের ছিদ্র একটু মোটা করুন, আর ক্যাসিং আটকানোর ছিদ্র একটু চিকন।

২> এসি সকেট ও এসি সুইচ সংযোগ করে ফেলুন। সুইচের দুটি ফাকা পোর্টে ২২০ ভোল্ট এসি পাবেন


৩> এবার ট্রান্সফর্মারের এসি দুটির তার কানেক্ট করে ফেলুন।


৪> এবার ছবির অনুযায়ী ২ টা ডায়োড আর একটা ক্যাপাসিটরের কানেকশন করে ফেলুন। ক্যাপাসিটরের নেগেটিভ পয়েন্ট টি ক্যাসিংয়ের সাথে ঝালাই করে লাগিয়ে দিন। ক্যাপাসিটরের দুই লেগে ১৫ ভোল্ট ডিসি পাবেন।


৫>ক্যাপাসিটরের পজেটিভ এ একটা ডায়োডের নেগেটিভ লেগ জয়েন্ট দিয়ে পজেটিভ লেগ এ দুটি তার সংসুক্ত করুন। একটি তার চলে যাবে ব্যাটারির পজেটিভ এ, আরেকটি তার যাবে ফ্যান ও লাইটের সুইচের মাঝের পোর্টে। ব্যাটারির নেগেটিভ তারটি আসবে ক্যাসিং এর বডি থেকে। ব্যাটারীর পজেটিভ ও নেগেটিভ অংশে ব্যাটারী ক্লিপ লাগাবেন ঝালাই করে।




৬>ফ্যান ও লাইটের সুইচের উপরের ফাকা পোর্টে ২ টি ১ কিলো রেজিষ্টর সংযুক্ত করুন। এই দুইটি রেজিষ্টের অপর প্রান্তে দুইটি LED বসবে। LED র নেগেটিভ থাকবে বডির সাথে সংযুক্ত। দুইটি সুইচের উপরের পয়েন্ট থেকে দুটি তার RCA Jack এর মিডল পয়েন্টে কানেক্ট করবেন।


৭>এখন আপনি যদি লাইট সার্কিট টি বক্সের ভিতরে ফিট করতে চান তাহলে ছবি অনুযায়ী সার্কিটের নেগেটিভ বক্সের বডির সাথে কানক্ট করুন। আর পজেটিভ অংশটি কানেক্ট করুন লাইট সুইচের পোর্ট থেকে। আর এই সার্কিটের আউটপুট কানেক্ট করুন একটা CFL light এর ফিলামেন্ট এ। তবে এই সার্কিট ফিট করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে সার্কিটের হিটসিংকের সাথে বডির সংস্পর্শ না আসে। আমি AC Cord এর ফেলে দেওয়া কাভার এখানে ফিট করে দিয়েছি সুপার গ্লু দিয়ে।



৮>এবার ডায়োড আর সুইচের মাঝখানের তারটি কেটে ফেলুন। এই তারের দুই মাথায় একটি রিলে কানেক্ট করুন। রিলের পজেটিভ আর নেগেটিভ ক্যাপাসিটরের পজেটিভ নেগেটিভে যাবে। রিলের নেগেটিভ পজেটিভে একটা ডায়োড কানেক্ট করতে হবে। ডায়োডের পোলারিটি অনুযায়ি রিলের পজেটিভ নেগেটিভ নির্ধারন করবেন।






১০>এবার আপনার আপনার চার্জার রেডি। আপনি এখন একটা RCA Jack থেকে DC Fan আর একটা RCA Jack থেকে DC light এর ভোল্টেজ পাবেন। হলুদ তারের কানেকশনের অপর প্রান্ত থেকে সরাসরি ফিলামেন্ট জ্বালাতে পারবেন।



আপনার এলাকায় এসি ভোল্টেজ যদি লো(১৫০-১৮০) হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ১৮ ভোল্টের ট্টান্সফর্মার লাগাতে হবে। সেক্ষেত্রে এসি তারের একটা ডায়োড কমে যাবে অথবা ৪ টা ডায়োড দিয়ে ব্রিজ কানেকশন করতে হবে।

এবার আমাদের চার্জার টেষ্ট করার পালা। ভিডিওটা দেখুন।


এই ধরনের আইপিএস বাজারে কিনতে পাওয়া যায় ৩০০০-৩৫০০ টাকায়। ফ্যান ছাড়া এবং সেখানে নষ্ট CFL ফিলামেন্ট জ্বালানোর কোন উপায় থাকে না, শুধু DC light জ্বালানোর উপায় থাকে। এবং বাজারের চার্জারে পুরাতন নষ্ট ব্যাটারি ও অতি নিম্ন মানের ট্রান্সফর্মার ইউজ করা হয়, যা বেশদিন টিকে না। আপনাকে ওরা ওয়ারেন্টি দিবে তবে ঐ নষ্ট ব্যাটারী ও নিম্নমানের ট্রান্সফর্মার দিয়ে সার্ভিস দিবে।

এই প্রজেক্ট টি খুবই সহজ। যে কোন বয়সের যে কেউ এই মিনি আই পি এস বানিয়ে ফেলতে পারেন কোন ধরনের অসুবিধা ছাড়াই। যদি কেউ এই প্রজেক্টে টাকা খরচ করে ব্যার্থ হন তাহলে এই ব্লগার সফল করার দায়িত্ব নিবেন। ব্লগ ফোন অথবা ইমেইল সাপোর্টের মাধ্যমে।

প্রথমবার সোল্ডারিং আয়রন, লিড, মাল্টিমিটার, ড্রিল মেশিন কিনার পরে প্রজেক্টটি আর্থিকভাবে লাভবান হবে না। তবে একের অধিক আই পি এস বানাতে গিয়ে এই প্রাথমিক খরচটা আর হবে না। সেক্ষেত্রে আপনার পরিশ্রম বৃথা যাবে না। প্রতিটা ইউনিটে বাজার মূল্যের ৪০০-৫০০ টাকা লাভ থাকবেই। আর ব্যাপারটা যদি স্রেফ শখের বশেই করার ইচ্ছা পোষন করেন, তাহলে লাভের কথা নাই বা বললাম।

(আমার বাংলা গদ্য ভালো না। ভাষার ব্যাবহারে কোন কারুকার্য নেই। তাই বাক্য গঠনে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। এমনটা হলে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ। হোম মেইড ভিডিও দুটি দেখে হাসির উদ্রেক হইলেও হইতে পারে)

ইমেইল : [email protected]

ইলেক্ট্রনিক্সের টুকিটাকি নিয়ে ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলেছি। সেখানে জয়েন করতে পারেন। নিজেদের জিজ্ঞাসা, পরামর্শ, সমস্যা, অভিজ্ঞতা শেয়ারে খুব ভালো হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১২ সকাল ৯:০৭
৩৮০টি মন্তব্য ৩৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×