somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিশোর গ্যাং

১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০০ সালে শাহরুখ খান ও ঐশ্বরিয়া রাইয়ের একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল, "জোশ।" শাহরুখ সেখানে এলাকার গুন্ডা, স্থানীয় দুই গ্যাঙের মধ্যকার কামড়াকামড়ি নিয়েই সিনেমার কাহিনী এগোয়।
সিনেমাটা বক্সঅফিসে কিছু করতে পেরেছিল কিনা মনে নেই, তবে আমাদের দেশে কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান খুব সম্ভব সেই সিনেমার পর থেকেই।
এক এলাকার কুত্তা (ইচ্ছা করেই কুকুর শব্দটা ব্যবহার করলাম না) অন্য এলাকায় গেলে দেখবেন স্থানীয় কুত্তাগুলি ঘেউ ঘেউ করে উঠে। জোশ সিনেমায়ও একই ব্যাপার দেখানো হয়েছে। দুই এলাকার দুই গ্যাংয়ের এলাকা ভাগ করা থাকে। অমুক দলের কেউ তমুক এলাকায় গেলেই মাইরধর শুরু হয়।
তা ২০০১ এ এসএসসি শেষে যখন আমি ঢাকায় ফুপুর বাড়িতে গেলাম, দেখি সেই এপার্টমেন্টে কমপ্লেক্সের বাচ্চাদের মধ্যেও নেড়ি কুত্তার এই স্বভাবটা ঢুকে গেছে। ওদেরও দুইটা আলাদা গ্যাং আছে, এবং এই দলের ছেলে ঐ দলের এলাকায় যেতে পারবে না।
ধীরে ধীরে দেখলাম গোটা মহল্লাতেও ঘটনা এক। সব শিশু কিশোরের দল, এলাকার "বড় ভাইরা" ওদের আইডল। বড় ভাইরা স্থানীয় চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়, বিড়ি সিগারেট, মদ-মাদক খায়, ওরা চ্যালা চামচামি করে। বড় ভাইরা অমুক তমুকের সাথে "গ্যাঞ্জামের" কাহিনী শোনায়, ওরা মুগ্ধ হয়ে শোনে। নিজেদের গ্যাঞ্জামও ওরা সেভাবেই মেটায়।
অমুকের তমুক মেয়েকে পছন্দ। নিজের ক্ষমতা নাই মেয়েটাকে গিয়ে সরাসরি বলার, পটাবার, প্রেম করার। ভদ্রঘরের মেয়ে। ওর কাছে অমুক হচ্ছে রাস্তার ছ্যাচরা পোলার বেশি কিছু না। তার পছন্দ ভদ্রস্থ ঘরের সন্তান। হয়তো কোন ছেলেকে সে পছন্দও করে।
কথাটা যখন অমুকের কানে যায়, সে গিয়ে সেই ভদ্র ছেলেটার উপর আক্রমন করে। ক্ষমতা অনুযায়ী হয় থ্রেট দিবে, নাহয় মারধর করবে। মেয়েটা থেকে দূরে থাকতে বলে।
আমাদের যুগে এইসব ঘটনা কেবল গার্লফ্রেন্ড কেন্দ্রিক ছিল। এখন এই কিশোর গ্যাংয়ের পোলাপান চাঁদাবাজি করে, খুনাখুনিও করে। চিটাগংয়েই অতি সম্প্রতি এক ডেন্টিস্টকে খুন করেছে ওরা। জানা গেছে এলাকায় ওদের টর্চার সেলও আছে, কেউ যদি ওদের কথাবার্তা না শোনে, সেখানে নিয়ে মারধর করা নিয়মিত ঘটনা। গোটা শহরে কয়েক শ' কিশোর গ্যাং আছে যাদের সদস্য সংখ্যা ৫-১৫, এবং সবাই কোন না কোন রাজনৈতিক ছায়ায় লালিত হয়ে আসছে। এইটা অবশ্য এমনিতেও বুঝা যায়। রাজনৈতিক প্রশ্রয় না পেলে শিশু কিশোরদের গ্যাং এমন বেপরোয়া আর নাগালের বাইরে চলে যেত না।
আপনি বলতে পারেন পুরো দায় পরিবারের। কিন্তু আপনি আপনার ছেলেকে ভদ্রছেলে বানান, সে রাস্তায় গিয়ে দিন রাত মার খাবে, বাড়িতে এসে আপনাকে বলবে, আপনি সর্বোচ্চ কি করতে পারবেন? পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, অভিভাবকদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই - আপনার ছেলে তখন আত্মরক্ষার জন্যই অন্য কোন গ্যাংয়ে যোগ দিবে। এইভাবেই কিশোর গ্যাংগুলো গড়ে উঠেছে এবং শক্তিশালী হয়েছে।
এ থেকে মুক্তির উপায় কি?
একযোগে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে প্রশাসন, কোথাও যদি কেউ নিজের কাজে ফাঁকি দেয়, তাহলে পুরো সিস্টেমটাই ভেঙে পড়বে।

১. পরিবারগুলো নিজেদের বাচ্চাদের বেশি বেশি সময় দিবে। টাকা পয়সা উপার্জন, চিত্তবিনোদন সব যার যার জায়গায় ঠিক আছে, কিন্তু আমার বাচ্চা কার সাথে মিশছে, কাদের সাথে খেলছে, কাকে পীর মানছে ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদেরই নজরদারি করতে হবে। ওদের ভাষার প্রতি লক্ষ্য রাখুন। গালাগালি শুরু করতেই ধমক দিন। কারোর সাথে বেয়াদবি করলে, অন্যায় করলে, কোন বাচ্চাকে বুলি করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিন। অধঃপতনের প্রাইমারি লক্ষণ প্রকাশ পায় মুখের ভাষাতে, আচার আচরণে। এই বিষয়গুলো যেন আপনার নজর না এড়ায়। অতি ভদ্রঘরের অতি ভদ্র গোবেচারা ছেলেকেও কিশোর অপরাধে জড়াতে দেখেছি, কাজেই "আমার ছেলে এইসব করবে না" - টাইপ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।

২. এলাকায় কোথায় কোথায় মাদক পাওয়া যায়, কে কে জড়িত, কারা কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে ইত্যাদি সব তথ্য জানার চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই শেখান যেন ওদের এড়িয়ে চলে। বাড়িতেই গ্যাং, গুন্ডামি ইত্যাদি বিষয়ে ঘৃণার পরিবেশ গড়ে তুলুন। এতটাই যে ওরা যখন কোন গুন্ডাকে গুন্ডামি করতে দেখবে আপনাতেই যাতে ওদের মন বিষিয়ে উঠে। এইটা অত্যন্ত জরুরি। জোশ সিনেমায় শাহরুখ খানকে হিরো না বানালে অনেক কিশোরই এই ফালতু জগতে পা বাড়াতো না।

৩. বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকতেই হবে। আমাদের দেশে আমরা বাচ্চাদের জীবনকে অসুস্থ করে ফেলছি। দিনরাত শুধু পড়ালেখা আর পড়ালেখা। খেলার জন্য কোন মাঠ নেই, আকাশ ছোঁয়ার স্পর্ধা নিয়ে গড়ে উঠছে একের পর এক দালান। বাচ্চারা অবসরে খেলবে কোথায়? ঘাম ঝরাবে কোথায়? স্কুলেই খেলার মাঠ নাই, ওরা খেলবে কোথায়? ইনডোর স্পোর্টস (টেবিল টেনিস/ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি) বা আউটডোর (ক্রিকেট/ফুটবল) যাই হোক না কেন, খেলার ব্যবস্থা করতেই হবে। কিছু না থাকলে সাইকেল চালাও বা পুকুরে গিয়ে সাঁতরাও। বাচ্চাদের অবসর দেয়াই চলবে না। শরীর ঘামাতে হবে এবং পড়ালেখা করতে হবে - এই হবে ওদের রুটিন।
ঢাকায় আমরা প্লাস্টিকের বলেও ক্রিকেট খেলেছি যাতে বাড়ির কাঁচ, গাড়ির বডির সমস্যা না হয়। বাচ্চারা যা দিয়েই খেলুক, তাতাই বিনোদন খুঁজে পাবে। ফলে বিনোদনের জন্য ওদেরকে ফালতু আড্ডার খোঁজ করতে হবেনা।

৪. কিশোরদের বড়দের মতই ট্রিট করুন। ওরা বেড়ে উঠছে, ওদের কাঁধে ছোট বড় দায়িত্ব দিতে শুরু করুন। কিভাবে বিল শোধ করতে হয়, বাজার করতে হয় শেখান। পারিবারিক নানান সমস্যা নিয়ে ওদের সাথে আলোচনা করুন, সমাধানে ওদেরও মত জানুন। ওদের ভুলগুলো কেন ভুল সেটা বুঝান। কেন আপনার ডিসিশনটা সঠিক সেটাও ব্যাখ্যা করুন।

৫. পুলিশের বিকল্প নাই। পুলিশ যদি শক্তহাতে একে দমন না করে, তাহলে এর মূলোৎপাটন সম্ভব না।

৬. রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। শৈশব-কৈশোর সময়গুলো লেখাপড়ার সময়, নির্মল বন্ধুত্বের সময়, আমাদের জীবনের সেই সময়টা অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি করতে হলে পড়ালেখা শেষ করে করুক। কিন্তু অকালে এর বিষাক্ত ছায়ায় চলে এলে মন মস্তিষ্ক ঠিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ হারায়।

৭. সবচেয়ে বেশি যা জরুরি তা হচ্ছে এলাকায় অভিভাবকদের নিয়ে একটি সমিতি গড়ে তুলুন। নিয়মিতই মিটিং হবে, সেখানে এলাকার এইসব সমস্যা ও সমাধান নিয়েই আলোচনা হবে। যার যার বাচ্চা তাকে তাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এলাকার সামাজিক বিভিন্ন কাজকর্মে নিজেরা যুক্ত হন, বাচ্চাদেরও যুক্ত করুন। ওদের মাথায় ঢুকিয়ে দিন হিরো হতে হলে লেদার জ্যাকেট পরে বাইক চালাতে হয়না, সাধারণ পোশাকেও হিরো হওয়া যায়, কাজটা হিরোর মতন হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৯
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×